এজিআই (AGI)-এর পথে: কী কী পেরোলাম আর সামনে কী চ্যালেঞ্জ?

এজিআই (AGI)-এর পথে: কী কী পেরোলাম আর সামনে কী চ্যালেঞ্জ?

আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (AGI) মানে হলো এমন একটা বুদ্ধিমান সিস্টেম, যেটা মানুষের মতো যেকোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে পারবে। এখনকার এআই (AI) একটা নির্দিষ্ট কাজ খুব ভালো পারে, যেমন ছবি চেনা বা ভাষা অনুবাদ করা। কিন্তু AGI সব কাজ করতে পারবে। এটা প্রযুক্তির দুনিয়ায় আমাদের সবচেয়ে বড় স্বপ্নের মধ্যে একটা। কিন্তু এই স্বপ্নপূরণের পথটা একদম সহজ না, অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। এই ব্লগে আমরা এজিআই-এর এই যাত্রা, এর অর্জনগুলো আর সামনের প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে কথা বলবো।

এজিআই-এর পথে মাইলফলকগুলো

এজিআই-এর ধারণাটা অনেক পুরোনো হলেও, এর বাস্তব রূপ দিতে গবেষকরা অনেক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন নিচে দেওয়া হলো:

  • এআই-এর শুরু: গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এআই-এর সূত্রপাত। জন ম্যাককার্থি 'আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স' শব্দটা ব্যবহার করেন। ১৯৫০-৬০ এর দশকে 'এলিজা' (ELIZA) বা 'শেইকি' (Shakey) এর মতো প্রোগ্রাম তৈরি হয়েছিল, যা সীমিত আকারে কাজ করতে পারত।
  • এআই শীতকাল: অনেক সময় এআই গবেষণায় তহবিল কমেছে, কারণ শুরুর দিকের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এটাকে 'এআই উইন্টার' (AI Winter) বলা হয়। এই সময়ে অগ্রগতি ধীর ছিল।
  • ডিপ লার্নিং-এর জয়যাত্রা: ২০০০-এর দশকের পর থেকে ডিপ লার্নিং (Deep Learning)-এর কল্যাণে এআই আবার ঘুরে দাঁড়ায়। বিশাল ডেটা আর শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করে এটা অভূতপূর্ব উন্নতি করে। ছবি শনাক্তকরণ, ভয়েস রিকগনিশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিপ্লব আসে।
  • গেম খেলায় বিজয়: ডীপ মাইন্ডের (DeepMind) আলফাগো (AlphaGo) যখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারায়, তখন অনেকেই অবাক হয়ে যায়। এটা দেখায়, এআই কতটা জটিল কৌশল শিখতে পারে এবং মানুষের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
  • ভাষা মডেল: ওপেনএআই (OpenAI)-এর জিপিটি-৩ (GPT-3) বা জিপিটি-৪ (GPT-4) এর মতো ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলো মানুষের মতো লেখা তৈরি করতে, প্রশ্ন বুঝতে, এমনকি কোডও লিখতে পারে। এগুলো AGI-এর দিকে একটা বড় ধাপ, যা সাধারণ কথোপকথন এবং সৃজনশীল লেখায় এআই-এর ক্ষমতা দেখিয়েছে।

এজিআই-এর পথে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো

এত অর্জন সত্ত্বেও, এজিআই তৈরি করা এখনও অনেক দূরের পথ। এর জন্য কিছু বড় চ্যালেঞ্জ আছে:

  • গণনা শক্তি আর ডেটা: AGI তৈরি করতে কল্পনাতীত পরিমাণ গণনা শক্তি আর ডেটা লাগবে। এটা পরিবেশের উপরও চাপ ফেলতে পারে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ অনেক ব্যয়বহুল হবে।
  • সাধারণ জ্ঞান: মানুষের মতো 'সাধারণ জ্ঞান' বা 'কমন সেন্স' এআই-কে শেখানো খুব কঠিন। একটা জিনিস যেটা আমরা স্বাভাবিকভাবেই জানি, এআই সেটা সহজে শিখতে পারে না। যেমন, একটা চেয়ার দিয়ে যে বসা যায়, এটা এআই-কে আলাদা করে শেখাতে হয়।
  • নৈতিকতা আর নিরাপত্তা: AGI যদি সত্যি সত্যিই মানুষের মতো বুদ্ধিমান হয়, তাহলে এর ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। এটা কীভাবে ব্যবহার করা হবে, এর নৈতিক দিকগুলো কী হবে, আর এটা যেন আমাদের জন্য বিপদ না হয়, সেদিকে নজর রাখা খুব জরুরি।
  • “এজিআই তৈরি করার সময় এর নৈতিক দিকগুলো সবার আগে ভাবা উচিত। এর যেনো কোনো নেতিবাচক প্রভাব না হয়, সেটা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।”

  • বেছে চলার প্রবণতা (Bias): এআই মডেলগুলো যে ডেটা থেকে শেখে, তাতে যদি কোনো পক্ষপাত থাকে, তাহলে এআই-ও সেই পক্ষপাত দেখাবে। এটা সমাজে বৈষম্য তৈরি করতে পারে।
  • মানুষের মতো শেখা: মানুষ একবার দেখে বা একবার শুনেই অনেক কিছু শিখতে পারে। এটাকে বলা হয় 'ওয়ান-শট লার্নিং' বা 'ফিউ-শট লার্নিং'। এআই-এর জন্য এটা এখনও অনেক কঠিন। তাদের শিখতে অনেক ডেটা আর পুনরাবৃত্তি লাগে।
  • চেতনা আর অনুভূতি: AGI কি কখনো সচেতন হতে পারবে? বা মানুষের মতো অনুভূতি বুঝতে পারবে? এটা দার্শনিক প্রশ্ন হলেও, AGI-এর একটা বড় অংশ জুড়ে আছে। যদি তা পারে, তাহলে মানুষের সাথে এর সম্পর্ক কেমন হবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন।

ভবিষ্যৎ পথ

এজিআই কবে আসবে, তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না। হয়তো কয়েক দশক, হয়তো আরও বেশি সময় লাগবে। তবে এই পথে প্রতিটা ছোট অর্জনই আমাদের মানবজাতিকে নতুন কিছু শেখাচ্ছে এবং প্রযুক্তির সীমানা প্রসারিত করছে। AGI যেন মানুষের কল্যাণে আসে, এবং সমাজের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে, সেই লক্ষ্যেই আমাদের কাজ করা উচিত। এর নিরাপদ এবং নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

© ২০২৪। সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।

Post a Comment

Previous Post Next Post