ফিঙ্গারপ্রিন্ট আর মুখের বাইরে বায়োমেট্রিক: ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কেমন হবে?
আমরা আজকাল ফোন আনলক করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনলাইন পেমেন্টে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি ব্যবহার করি। এই পদ্ধতিগুলো আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হ্যাকাররাও আরও স্মার্ট হচ্ছে। তাই শুধু ফিঙ্গারপ্রিন্ট আর ফেস আইডি কি ভবিষ্যতের জন্য যথেষ্ট?
কেন নতুন পদ্ধতি দরকার?
ফিঙ্গারপ্রিন্ট নকল করা বা ফেস আইডি ভুলিয়ে দেওয়া (যেমন, মাস্ক পরে) আজকাল আর অসম্ভব নয়। কিছু ক্ষেত্রে প্রাইভেসি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তাই, শুধু এই দুটো পদ্ধতির উপর ভরসা না করে আরও শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ অথেন্টিকেশন সিস্টেম খোঁজা হচ্ছে।
চেনা সীমানার বাইরে নতুন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিগুলো
- আইরিশ রিকগনিশন (Iris Recognition): চোখের আইরিশের প্যাটার্ন সবার আলাদা হয়, যা ফিঙ্গারপ্রিন্টের চেয়েও বেশি ইউনিক। এটা খুব নির্ভুল আর নকল করা কঠিন। এয়ারপোর্ট বা হাই-সিকিউরিটি জায়গায় এর ব্যবহার বাড়ছে।
- ভয়েস রিকগনিশন (Voice Recognition): আপনার গলার স্বর বা কথা বলার ধরনও আপনার পরিচয়ের অংশ। ফোন ব্যাংকিং বা স্মার্ট হোম ডিভাইসে এর ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে অসুস্থতা বা ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজের কারণে এর কার্যকারিতা কিছুটা কমে যেতে পারে।
- ভেন রিকগনিশন (Vein Recognition): হাতের তালু বা আঙুলের নিচে থাকা রক্তনালীর প্যাটার্ন ব্যবহার করে এই পদ্ধতি কাজ করে। এটা বাইরে থেকে দেখা যায় না বলে নকল করা প্রায় অসম্ভব। এটি বর্তমানে এটিএম বা হসপিটালে ব্যবহার হচ্ছে।
- বিহেভিওরাল বায়োমেট্রিক্স (Behavioral Biometrics): আপনি কিভাবে টাইপ করেন, আপনার হাঁটার ধরন বা মাউস ব্যবহারের স্টাইল—এই সবকিছুই আপনার ইউনিক প্যাটার্ন। এই পদ্ধতি খুব একটা সচেতনভাবে কাজ করে না, বরং পেছনে থেকে আপনার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে।
- ইসিজি (ECG/Electrocardiogram): আমাদের হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ থেকে যে প্যাটার্ন তৈরি হয়, তা প্রতিটি মানুষের জন্য আলাদা। এটি বেশ নতুন একটি পদ্ধতি এবং এটিকে নকল করা অত্যন্ত কঠিন।
সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
এই নতুন পদ্ধতিগুলো নিরাপত্তার মাত্রা অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে। ব্যবহারকারীদের জন্যেও হয়তো আরও বেশি সুবিধা আসবে, কারণ অনেক সময় পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝামেলা থাকবে না। কিন্তু, এর চ্যালেঞ্জও আছে। প্রাইভেসি নিয়ে চিন্তা, বিশাল ডেটা সংরক্ষণের প্রয়োজন, আর এই প্রযুক্তি সবার জন্য কতটা সহজলভ্য হবে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
"ভবিষ্যতে শুধু ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি নয়, আরও অনেক নতুন বায়োমেট্রিক পদ্ধতি আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।"
ভবিষ্যতের পথে
ভবিষ্যতে আমরা হয়তো দেখবো একটির বদলে একাধিক বায়োমেট্রিক পদ্ধতির সমন্বয় ব্যবহার হচ্ছে, যেমন—আপনার গলার স্বরের সাথে আপনার টাইপিং প্যাটার্ন। এতে করে নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় হবে। বায়োমেট্রিক প্রযুক্তির এই বিবর্তন নিঃসন্দেহে আমাদের ডিজিটাল জীবনকে আরও নিরাপদ এবং সহজ করে তুলবে।
Post a Comment