কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: মার্কিন জনতা ও বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: মার্কিন জনতা ও বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি

এআই (Artificial Intelligence) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর কেবল কল্পবিজ্ঞানের বিষয় নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা, শিল্পকারখানা—সব জায়গাতেই এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই দ্রুত বিকশিত প্রযুক্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ আর এআই বিশেষজ্ঞদের ভাবনা কি একই রকম? নাকি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বেশ কিছু পার্থক্য আছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের মধ্যে এআই নিয়ে বেশ মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। অনেকেই এআইকে ভবিষ্যৎ উন্নতির এক বিশাল সম্ভাবনা হিসেবে দেখে, যা জীবনকে আরও সহজ, নিরাপদ ও উন্নত করবে। যেমন, স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বা রোগ নির্ণয়ে এআইয়ের ব্যবহার তাদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। তাদের বিশ্বাস, এআই নতুন নতুন উদ্ভাবনের দুয়ার খুলে দেবে এবং মানবজাতির অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করবে।

তবে একটা বড় অংশ আবার এআই নিয়ে গভীর চিন্তিত। তাদের প্রধান ভয় হলো, এআই হয়তো মানুষের চাকরি কেড়ে নেবে, বা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করবে। অনেকে আবার হলিউডের সিনেমা বা সায়েন্স ফিকশনের প্রভাবে এআইকে নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের ভয় পায়, যেখানে রোবট বা সুপার-এআই মানবজাতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে। ভুল তথ্য ছড়ানো বা সামাজিক বিভেদ সৃষ্টিতে এআইয়ের সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়েও তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।

অন্যদিকে, এআই বিশেষজ্ঞরা এআইয়ের সম্ভাবনা আর ঝুঁকি দুটোই খুব কাছ থেকে বোঝেন। তারা মনে করেন, এআই কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বিজ্ঞান—সব ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে নতুন ওষুধ আবিষ্কার, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা বা মহাকাশ গবেষণায় এআইয়ের ক্ষমতা অপরিমেয়। তারা এআইকে মানব বুদ্ধিমত্তার পরিপূরক হিসেবে দেখেন, যা মানুষের ক্ষমতাকে বহু গুণে বাড়িয়ে দেবে।

একজন শীর্ষস্থানীয় এআই গবেষক বলেছেন, "এআইয়ের সম্ভাবনা সীমাহীন, কিন্তু এর নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, মানবকল্যাণই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।"

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এআইয়ের নৈতিক দিক, পক্ষপাত (bias), ডেটা নিরাপত্তা এবং এর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার বিষয়গুলো নিয়েও গভীরভাবে চিন্তিত। তারা এআইয়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কঠোর নিয়মকানুন, তদারকি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা বলেন। তাদের মতে, এআই যেন মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হয় এবং সমাজের বৈষম্য না বাড়ায়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা দরকার। এআইকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং নির্ভরযোগ্য করে তোলার ওপর তারা জোর দেন।

সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞদের এই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষ প্রায়শই প্রযুক্তির দৃশ্যমান সুবিধা বা বিপদের দিকটা দেখে, আর বিশেষজ্ঞরা এর গভীর কারিগরি ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে ভাবেন। এআইয়ের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই দুই পক্ষের মধ্যে সঠিক বোঝাপড়া, খোলা আলোচনা আর সহযোগিতার উপর। সঠিক নীতি ও নৈতিকতার ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করে এআইকে মানবজাতির জন্য একটা আশীর্বাদে পরিণত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

Post a Comment

أحدث أقدم